করোনার দিনগুলোতে ভালো থাকুন - ডা. ভাস্কর দাস

গত ৩/৪ মাস সময়টা কাটছে বিভ্রান্তির অন্ধকূপে। কদিন আগে জানলাম, একজন মানুষেকে করোনায় অসুস্থ করতে ( রোগলক্ষণহীন আক্রান্ত নয় ) তার শরীরে ৭০০০কোটি ভাইরাসের উপস্থিতি প্রয়োজন। এইভাবে ৪০ লক্ষ মানুষকে সংক্রমিত করতে কত ভাইরাস লাগবে, তাকে সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করলে সেটা বোধের বাইরে থাকবে। তবে তাদের সম্মিলিত ওজন দিয়ে সেটা প্রকাশ করলে কিছু সুবিধে আছে। কারণ ওজনটা ২ গ্রাম। ঠিকই পড়েছেন - দুই গ্রাম।  মাত্র ২গ্রাম ওজনের এক প্রাণী আজ মানবসভ্যতাকে হাঁটু মুড়ে বসিয়ে দিয়েছে মাটিতে। জ্ঞান বিদ্যার অহংকারের আলখাল্লাটা গা থেকে খসে পড়েছে। উদ্ভ্রান্তের মত সমাধানের সূত্র খুঁজতে গিয়ে মানুষ আজ বিভ্রান্তির কারাগারে বন্দী। সাধারণ মানুষ, বিশেষজ্ঞ, WHO, CDC র মত সংস্থা, Lancet, NEJM এর মত মানী জার্নাল, সরকার ও প্রশাসন, সকলেই এক বিভ্রান্তির অতিমারীর কবলে। ফলে সকলেই তাকিয়ে কোন এক ঈশ্বরপ্রতিম সূত্রের দিকে যাঁর পরামর্শ এক দুই করে প্রদোষের এই আবছায়া থেকে তাকে মুক্ত করবে। দুঃখের সঙ্গে জানাই , সেরকম কেউ নেই। আমিও আপনাদের কারোর চেয়ে খুব বেশী কিছু জানি না, যাতে পরামর্শ দাতার আসনে বসা যায়।  প্রতিদিনের জীবনে সাবধানতার কি অনুপানের ব্যবস্থা থাকা দরকার, তার বিস্তারিত বিবরণ যা আমরা স্কুলবেলায় ব্যক্তিগত স্বাস্থরক্ষার বিধিতে পড়েছি, তাতে যোগ করার কিছু নেই। আর  টিভির দৌলতে হাতে সাবান মাখার সময় কি করে কুমির প্রজাপতি আঁকার কচিখোকামো করতে হয়, আর ভিটামিন সি, জিঙ্ক ইত্যাদি খাইয়ে আপনার শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে "দেখো আমি বাড়ছি মামি" বলাতে হয়, তা এতদিনে বিলক্ষণ আপনার নখদর্পনে। আমি বরং অন্য কিছু কথা বলি।

এতদিনে জেনে গেছেন কোভিডের মৃত্যুহার ৩-৪%। অর্থাৎ ১০০ জনে মৃত্যু হবে ৩/৪ জনের। না, হিসেবে ভুল হল। এর মানে আক্রান্ত মানুষের মধ্যে ওই শতাংশের মৃত্যু হবে। আক্রান্ত জানতে হলে পরীক্ষা করতে হবে। আমেরিকায় যত জন পরীক্ষায় পজিটিভ হয়েছে, অপরীক্ষিত কোভিড পজিটিভ মানুষ  আছেন তার ৪৫ থেকে ৮০ গুন - তথ্য ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির।  ভারতে পরীক্ষা কমের কারণে আরো বেশি। ভারতীয় ইম্যুনিটি আর একটি বিষম বস্তু, যার কাছে করোনাও কিছুটা মাথা হেঁট করেই থাকে। সব মিলিয়ে ভারতে করোনার Fatality rate দশ হাজার এক জন। সারা পৃথিবীর গড় fatality rate 0.032 % অর্থাৎ দশ হাজারে ৩ জন।
এবার অন্য ভাইরাসজনিত অসুখের সঙ্গে যদি মিলিয়ে দেখা যায়, তবে দেখবো যে মৃত্যুহারের হিসেবে বাকিরা কয়েক কদম এগিয়ে। যেমন :
সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা ০.১%, হেপাটাইটিস বি/সি ১৩.৫%, হাম ১৫%, ডেঙ্গু ৩.৫%, সার্স/মার্স ৩৫%, ইবোলা ৫০%।

কেঁপেছেন কোনোদিন এদের ত্রাসে? বলেছেন লকডাউন চলুক আরও আরও বেশী দিন? আত্মীয় পরিজন, বন্ধুবান্ধবের মুখদর্শন না করার শপথ নিয়ে পালন করেছেন সামাজিক দূরত্ববিধি। ভেবে দেখেছেন শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রক্রিয়াটির ওই বিশেষ নামের কয়েনেজের পেছনে সামাজিক গাঁটছড়া আলগা করার কূট অভিসন্ধি আছে কিনা?

এতদিনে করোনায় যেখানে মৃত্যু হয়েছে সাড়ে ৮ হাজার লোকের, সেখানে তার বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থায় ১২ কোটি মানুষ বেকার, ৩৬ কোটি মানুষের মুখে দু বেলা ভাতের সংস্থান হচ্ছেনা।  লকডাউনের মধ্যেই ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণ আটকায় না, মজুতদারির ঊর্ধসীমার বিলোপ ঘটে, শ্রম আইনের ৩৮টি ধারার ৩০টি হওয়ায় মিলিয়ে যায়। নিজের দেশের চৌহদ্দিতে
কাজ করা মানুষের বিশেষণ জোটে 'পরিযায়ী'।

সাবধানে থাকুন, পাশাপাশি এই বিষয়গুলো মাথায় রাখুন, চর্চায় রাখুন। অবসরে চোখ রাখুন অন্য দৃষ্টিভঙ্গিতে করোনাকে দেখার চেষ্টায় ফলাফল সমন্বিত বিভিন্ন মানুষের লেখায়। জেনে নিন কতটা অন্য খেলার ভূমিকা রয়েছে এই অতিমারীর বিস্তারে। জানুন যে এই অতিমারীকে আতঙ্কের এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পেছনে কোন পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত  আছে কিনা। থাকলে কারা সেই পরিকল্পনার অংশীদার।

এও কিন্তু ডাক্তারি উপদেশ। মনের উদ্বেগ থেকে মুক্তি পেলে তবেই না শরীরের সুস্থতা নিয়ে ভাবনা। এটা কিন্তু পরীক্ষিত সত্য, অতিরিক্ত মানসিক চাপ আপনার ইম্যুনিটি কে ক্ষতিগ্রস্ত করে, ফলে রোগাক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বাড়ে।

 আতঙ্ক ঝেড়ে ফেলুন ঘাড় থেকে।
টিভিতে অহরহ ভেসে ওঠা "আতঙ্কিত হবেন না" শব্দবন্ধ থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন।

করোনা যেন করোনারীর কারণ না হয়।