(পুরাণে আছে সগর রাজার পুত্রদের প্রাণ ফিরে পেতে ঐ বংশের অন্যতম পুরুষ ভগীরথ গঙ্গাকে মর্তে নিয়ে আসেন। ভগীরথ গঙ্গাকে মর্তে নিয়ে এসেছিলেন বলেই গঙ্গার আর এক নাম ভাগীরথী। কথিত আছে ভাগীরথীর পবিত্র জল স্পর্শে সগর রাজার ষাট হাজার পুত্র প্রাণ ফিরে পেয়েছিলেন। কিন্তু সেটাই কি ভাগীরথীর একমাত্র স্বার্থকতা? সে কি যুগ যুগান্ত ধরে শুধুই রাজপুরুষদেরই স্বার্থ দেখে যাবে! সেই প্রশ্নের উত্তরের খোঁজেই এই কটা লাইন)
ওখানে আমাদের বাড়ী ছিল
আজ আর সে সব কিছুই নেই
ভাগীরথী কেড়ে নিয়েছে তাকে,
ওখানে এখন শুধুই জল আর জল
ভাগীরথীর জল।
আমাদের গ্রামেও সূর্য উঠত
পুব আকাশকে লাল করে
আর ডুব দিত বিকেলে –
ঐ ভাগীরথীতেই।
রফিকুলের মা দুধ বেচতো
বাঁশতলায় গান গাইত সনাতন বৈরাগী
আমরা বল খেলতাম ইস্কুলের মাঠে,
রাত্রে গল্প শুনতাম মায়ের কোল ঘেঁষে
গা ছমছমে সে সব গল্প –
শুনতে শুনতেই চোখ আসতো ঢুলে।
সে সব আর কিছুই নেই
ওখানে এখন শুধুই জল আর জল
নদীর জল –
কলকল খলখল –
ভাগীরথীর জল।
অথচ এই রকম তো হবার কথা ছিল না
ঐ তো সেবার – সেই বর্ষার আগে –দক্ষিণপাড়া তখনো জলের ওপরে ---
সগর রাজকুমার এলেন – সব কিছু দেখলেন – ঘুরলেন
কত কথা বললেন আমাদের সাথে –
বললেন –
বাঁধ হবে এখনি – যাদব চন্দ্র মেদিনি – তেমনি।
এরপরে –
এরপরে হাততালি – হুড়োহুড়ি – মালাপরা – নিউ টিভি।
তারপর বর্ষা এল – ঘোর বর্ষা
আর ঐ ভয়ঙ্কর রাক্ষসী
বীভৎস উল্লাসে গিলে ফেলল আমাদের দক্ষিণপাড়া।
মা বললেন – আর নয় – এখান থেকে চল সবাই –
বাবা বললেন ভয় কি –
আমি তো আছি
রুখে দেব নদীকে
সাথে যে রাজ আশ্বাস আছে।
হায়রে,
নদী কানই দিল না বাবার কথায়
সে তখন রক্তের স্বাদ পেয়েছে।
এরপরেও ওনারা এলেন – সগর পুত্ররা –
বড় পুত্র – ছোট পুত্র
কালো পুত্র – ভালো পুত্র –
মালা পড়লেন – টিভির সাথে কথা বললেন – কথা শুনলেন –
আমাদের ভুলেই গেলেন –
ভাগীরথী কিন্তু ভুললো না –
নিঃশব্দে গ্রাস করে নিল আমাদের
ভিটামাটিকে ---
এ তুমি কাকে নিয়ে এলে ভগীরথ
আমাদের সর্বনাশের বিনিময়ে
রাজপুত্রদের প্রাণ বাঁচাতে -