অসম্ভব ভালো গদ্যভাষা, কিছু অনবদ্য চিত্রকল্প (পাঠ প্রতিক্রিয়া) - ডা. ভাস্কর দাস

মানস শেঠ, আগে থেকে আমার খুব পরিচিত লেখক, এমনটা নয়। পরম্পরার অনুষ্ঠানে টেবিলে সাজানো বইটা চোখ টেনেছিল প্রচ্ছদ আর নামের জোরে। কিনেই নতুন বই হাতে নেবার উত্তেজনায় প্রথম দুটি লেখা পড়ে ফেলেছিলাম এক নিঃশ্বাসে। তার আগে অবশ্যই ব্লার্ব আর সত্ৰাজিত গোস্বামীর অননুকরণীয় বাংলায় লেখা ভূমিকা। দুটোই মায়াময় গদ্যে লেখা প্রতিশ্রুতির ইঙ্গিত। তার যথার্থ আশাপূরণ প্রথম দুটো লেখায়। খাঁজকাটা হীরের মত দুটোতেই অনেক তলের চর্চা। আর এই গবেষণা আর চর্চার পেছনের তাগিদটা যে প্রকাশকের তাড়না নয়, নিজের জিজ্ঞাসা ও নির্ভেজাল কৌতূহল, তা বেশ বোঝা গেল। এরপর একটা বিরতি পরে গিয়েছিল ব্যক্তিগত ব্যস্ততায়। আজ সকাল থেকে এক নিঃশ্বাসে বাকিটা শেষ, আর সেই সূত্রে বাকি অবসেরভেশন।
পরের দুটি লেখায়, গবেষণায় ঘাটতি নেই হয়ত, আর প্রচ্ছদ ও নামকরণ অনুসারে এরাই lead article। কিন্তু তালিকায় একনম্বরের দৌড়ে একটু পেছনে। কোথায় একটু প্রানের স্পর্শ কম লাগলো। বিষয় যে লোকনৃত্য, বাস যার মাটির মানুষের হৃদয়ের পাতালপুরিতে। কিন্তু কৌটোয় রাখা প্রাণভোমরার ডানার আওয়াজ পেলেও, দর্শন হল না। কিছু কথা বলা যেন বাকি থেকে গেল।
সিনেমায় আমার একটু আলাদা ইন্টারেস্ট। সেই কোনকালে জুটেছিলাম ফিল্ম ক্লাবে। সেই সূত্রে গুগাবাবা অন্য মনোযোগ নিয়ে পড়েছি। তাতে মনে হল আরো কিছু বিশদ বিশ্লেষণ হয়ত আসতে পারতো। ভুতের নাচ, যা এই আদ্যোপান্ত রাজনৈতিক ছবির মেরুদন্ড, তাতে চাষা ভূতেরা প্রত্যেকে ১৮৫৭ পূর্ব এক একটি বিদ্রোহের প্রতিভূ। সাঁওতাল বিদ্রোহ, সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, লাঠিয়ালদের চুয়ার বিদ্রোহ, এইসব প্রত্যেকটিকে রিপ্রেজেন্ট করিয়েছেন সত্যজিৎ। শেষ পর্বে চারটি তলে চার দলের নাচ চলে।সেই দৃশ্যে সবার ওপরের তলে চলে আসে সাধারণ মানুষের দলটি। পৃথিবীতে তারাই যে নিয়ামক শক্তি, তার ইঙ্গিত দেন সত্যজিৎ। আর এই চার তলার কনসেপ্টটি উনি নেন টেরাকোটা মন্দিরের গায়ের নকশার থেকে। পর্দায় যা দেখছি, তাতে বাংলার সিলমোহর পড়ে এই উপস্থাপনায়। একটা  কথা, বাদ্যযন্ত্রটি কি মূঢ়শৃঙ না মোর্চাঙ ? আমার ভুল হতেও পারে। একমাত্র এই ছবিতে সাজসজ্জা করেছিলেন তিনি নিজে। সেই পারফেকশন ভুতদের পোশাকেও বিদ্যমান।
বাকি লেখাগুলোও যথাযথ। বিদ্যাসাগর সুলিখিত, এবং সেই সূত্রে আসা সেই সময়ের কলকাতা তথা বাংলার একাডেমিয়ার রূপটা ইনটারেস্টিং।
সব মিলিয়ে good reading। তবে মন কাড়া বিষয় হল প্রচ্ছদ (যদিও ছবিটি লো রেজ। হাই রেজ স্পষ্ট ছবি চাই), অসম্ভব ভালো গদ্যভাষা, কিছু অনবদ্য চিত্রকল্প।
আর নিঃসন্দেহে প্রায় প্রত্যেক প্রবন্ধের শিরোনাম। এরপর আমি কিছু লিখলে মানসের কাছে শিরোনাম করার রিকোয়েস্ট রাখব। ফেলতে পারবে বলে মনে হয় না।

লিমিটেশন :
কয়েকটি লেখাতে লিমিটেড শব্দসংখ্যার মধ্যে পত্রিকাপাঠ্য প্রবন্ধ লেখার ছাপ।


পাঠ প্রতিক্রিয়া

বাংলার চড়ক ও গাজন উৎসব এবং অন্যান্য

মানস শেঠ

মূল্যঃ  ১৫০ টাকা

পরম্পরা প্রকাশন কলকাতা ৯

৯৯০৩০৯১২২৫