আধুনিক জীবনে সংস্কৃত ভাষার গুরুত্ব

সংস্কৃত ভাষা শুধুমাত্র পূজা-পাঠ বা পৌরোহিত্যের জন্য নয়। সংস্কৃত ভাষা হিন্দুধর্ম, দর্শন, সংস্কৃতি, ন্যায়-নীতি, আদর্শ, শিক্ষা ও মূল্যবোধ, যোগ, জ্যোতিষ, সামুদ্রিক শাস্ত্র, বাস্তু শাস্ত্র, জ্যোতির্বিজ্ঞান, তন্ত্র-মন্ত্র ও পূজা-পাঠ, আয়ুর্বেদ, সঙ্গীত, নাটক, সাহিত্য, ব্যাকরণ-ছন্দ-কাব্য,বেদ বেদান্ত, গীতা, ইতিহাস, স্মৃতি, পুরাণ, মহাকাব্য, উপনিষদ, ভাষাতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, অর্থনীতি, যুদ্ধবিদ্যা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, পররাষ্ট্রনীতি, সমাজতত্ত্ব,পরিবেশ বিদ্যা প্রভৃতির আকর বা মুল উৎস(Resource)।সে জন্য উচ্চশিক্ষা স্তরের গবেষণায় সংস্কৃত জানা অতি আবশ্যক। আমেরিকা, ইউরোপ ও জার্মানি সহ বিশ্বের বহু দেশে সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা, পঠন-পাঠন ও গবেষণা চলছে। জার্মানির ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ সহ সংস্কৃতে Ph.D. পড়ান হয়। আধুনিক কম্পিউটার বিজ্ঞানীদের মতে সংস্কৃত ভাষা বিশ্বের একমাত্র বিজ্ঞান সম্মত ভাষা।
সংস্কৃত ভাষা সকল ভারতীয় ভাষার জননী স্বরূপ। সংস্কৃত ভাষা কঠিন নয় বরং সংস্কৃত ভাষা খুবই সুললিত, সুসংবদ্ধ, ছন্দময় এবং বিজ্ঞান সম্মত ভাষা। ফলে বহু বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, অধ্যাপক, গবেষক, জ্ঞানীগুণী ও পণ্ডিত ব্যক্তি অনায়াসে সংস্কৃত ভাষা শিখতে পেরেছেন। বাংলা ভাষার ৮০% শব্দই সরাসরি সংস্কৃত ভাষা থেকে নেওয়া কিম্বা কিছুটা বদলে নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে। একটু চেষ্টা করলে আপনিও সহজে সংস্কৃত ভাষা শিখতে পারবেন, কথা বলতে পারবেন, পূজা পাঠ করতে পারবেন, বই পড়তে পারবেন, বিভিন্ন মন্ত্র, শ্লোক, বাণী, উদ্ধৃতির অর্থ বুঝতে পারবেন, এমনকি সংস্কৃতে লিখতেও পারবেন। আসুন  স্পোকেন সংস্কৃত-র মাধ্যমে সংস্কৃত ভাষা শেখা শুরু করি। সংস্কৃত আপনার মনে ঘুমিয়ে আছে। সব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সরিয়ে নতুন করে শুরু করলেই দেখবেন সবকিছু আবার মনে পড়ে যাচ্ছে। মনে রাখবেন সকল জ্যোতিষী, পূজারি, পুরোহিত, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, অধ্যাপক, গবেষক ও সকল ধর্মপ্রাণ ব্যক্তির সংস্কৃত ভাষা জানা অবশ্য কর্তব্য।  বদতু সংস্কৃতম । জয়তু সংস্কৃতম ।

কিভাবে সংস্কৃত ভাষা শিখবেন ?
সংস্কৃতে বাক্যে ব্যবহৃত শব্দগুলি লিঙ্গ অনুসারে অর্থাৎ স্ত্রী,পুরুষ, নপুংসক পরিবর্তিত হয় । শুধুমাত্র বানান দেখে সব সময় লিঙ্গ বোঝা যায়না। শব্দগুলি লিঙ্গ অনুসারে তিন ধরণের এবং শব্দগুলি কিভাবে শেষ হচ্ছে (Ending)  অর্থাৎ শব্দগুলি- অকারন্ত, আকারান্ত, ইকারন্ত, ঈকারান্ত, উকারান্ত, ঊকারান্ত ইত্যাদি অনুসারে পরিবর্তিত হয়। একই ধরণের শব্দগুলির রূপ একই রকম হয়ে থাকে। ফলে অন্য শব্দগুলি সহজেই তৈরি করে নেওয়া যায়। একই ভাবে ধাতুগুলি মূলত তিন ধরণের, ফলে অন্যান্য ধাতুগুলির রূপ পরিবর্তন করাও সহজ হয়। সংস্কৃত বাক্যে কর্তার লিঙ্গ, বচন, পুরুষ ও বিভক্তি অনুসারে ক্রিয়ার রূপ হয়। প্রাথমিক শ্রেণীর (পঞ্চম/ষষ্ঠ) ব্যাকরণ বই দেখে ক্রিয়ার কাল (Tense), বিভক্তি (Case), লিঙ্গ (Gender) ও বচন (Number), পুরুষ (Person)-এর সাধারণ নিয়মগুলি জেনে নিন। এইটুকু বুঝে নিলেই সংস্কৃত শেখা খুবই সহজ হয়ে যাবে। এছাড়া একটা ভালো “গীতা” কিনুন। যেখানে শ্লোকগুলি বিস্তারিত ভাবে শব্দার্থ, পদ, অন্বয়, টিকা সহ বাংলায় ব্যাখ্যা দেওয়া আছে। শ্রীমদ্‌ ভাগবত গীতার সংস্কৃত ভাষা খুবই সহজ-সরল ও আধুনিক। তাই  গীতা পাঠ করলে গীতার জ্ঞান লাভ হবে, আবার সংস্কৃত শেখাও  হবে। সর্বেসাং মঙ্গলম ভবতু । 

বিঃদ্রঃ –    
১)  গীতা তত্ত্ব প্রবোধনী - (গীতা প্রেস, গোরখপুর ) দাম – ৮০/১২০ টাকা, 
২)   শ্রী শ্রী গীতা – ( বড় অক্ষরে লেখা  ‘পাঠ সংস্করণ’ )