অর্থ অনর্থের মূল কারণ নয়, অর্থ জীবনের অন্যতম চালিকা শক্তি। জল ছাড়া মাছ বাঁচেনা, শেকড় ছাড়া গাছ বাঁচেনা, তেমনি অর্থ ছাড়া জীবন চলে না। অর্থ বেঁচে থাকার রশদ যোগায়, জীবনকে সুস্থ, সুন্দর ও সহজ করে,। জীবনে নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা দেয়। তাই, অর্থের বাস্তব উপযোগিতাকে উপেক্ষা করা যায় না। জীবন ধারণের জন্য সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীও গৃহীর দ্বারে কৃপা প্রার্থী হন। জঠরাগ্নির জ্বালা সামলাতে না পেরে মহাকবি কালিদাস সখেদে বলেছিলেন “অন্নচিন্তা চমৎকারা”।
ধন-লক্ষ্মীর কৃপা লাভের জন্য মানুষ উদয়-অস্ত কঠোর পরিশ্রম করে। হাজার হাজার মানুষ অর্থের পিছনে ছুটে বেড়ান কিন্তু হাতে গোনা কয়েক জন ধন-লক্ষ্মীর কৃপা লাভ করেন। পৌঁছে যান রক থেকে রাজ প্রাসাদে। জ্যোতিষ বিশ্বাসী মানুষ ছুটে যান জ্যোতিষীর কাছে, জানতে চান অর্থভাগ্য কেমন? কোটিপতি হতে পারবেন কি না ?
অর্থের পরিমাপ ও পরিমাণ-এর ধারণা যুগ অনুসারে বদলে যায়। আশির দশকে চার অঙ্কের বেতন বা লাখপতি কথাটা বেশ মর্যাদা ও সমীহ জাগাত। এখন অনেকেই লক্ষাধিক টাকায় বেতন পান। আজকাল লাখপতি, কোটিপতি ইত্যাদির বদলে মিলিওনেয়ার, বিলিওনেয়ার বা ট্রিলিওনেয়ার কথাগুলি ব্যবহার করা হয়। বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে কোটিপতি কথাটা “বিপুল ধন-সম্পদ” অর্থে ব্যবহার করাই শ্রেয় বলে মনে করি। আসুন জ্যোতিষের দর্পণে দেখে নেওয়া যাক – কারা কপাল গুণে কোটিপতি হতে পারবেন।
সনাতন জ্যোতিষে ধন-সম্পদ বিচারের বিভিন্ন সূত্র, যোগ ও বিচার পদ্ধতি আছে। উত্তর কালামৃত মতে “ইন্দুলগ্ন” ধরে কোটিশ্বর তথা কোটিপতি বিচারের জটিল পদ্ধতি আছে। বর্তমান প্রবন্ধের স্বল্প পরিসরে সব ধরনের জটিলতা বাদ দিয়ে “পরাশর ও জৈমিনি” সম্মত মূল ধারার জ্যোতিষের মধ্যে আলোচনাকে সীমাবদ্ধ রেখেছি। বেছে নিয়েছি দু’জন বিশিষ্ট কোটিপতির জন্মছক। একজন ভারতীয় অন্যজন আমেরিকান। এঁরা দুজনেই অতি সামান্য অবস্থা থেকে কোটীপতির সিংহাসনে আরোহণ করেছেন এবং বিপুল ধন-সম্পদের অধীশ্বর হয়েছেন।
ধন সম্পদ বিচারের মৌলিক ধারা গুলি হল : -
ক) ধনকারক গ্রহ – বৃহস্পতি বুধ, শুক্র। বৃহস্পতি – স্বাভাবিক ধন কারক,বুধ – বিষয় বুদ্ধি ও ব্যবসাবাণিজ্য , শুক্র - ভোগ ঐশ্বর্য, ভোগের আকাঙ্ক্ষা ও ভোগ্য সামগ্রীর অধিকার, রাহু – অনায়াস ধন লাভের কারক, কেতু – গুপ্তধনের কারক,
খ) প্রধান ধন ভাব –
দ্বিতীয়, একাদশ, চতুর্থ ও অষ্টম ভাব। দ্বিতীয় – সঞ্চিত ধন, একাদশ – কর্মার্জিত ধন সম্পদ
চতুর্থ ও অষ্টম – উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ধন সম্পদ,
সহযোগী ধন ভাব – ১) লগ্ন+ পঞ্চম, দশম +একাদশ, ২) তৃতীয়+ ষষ্ঠ + একাদশ + রাহু যোগ। জাতচক্রে যে গ্রহ ধনকারক হবে সেই গ্রহ তার স্বধর্ম ও গুণ অনুসারে ফলদান করবে। শুভ ও সাত্ত্বিক গ্রহ ধন কারক হলে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্বাচ্ছল্য দেয়। উচ্চবিত্ত করে ও ধন-সম্পদে স্থায়িত্ব দেয়। অশুভ গ্রহ ধনকারক হলে বিপুল ধনসম্পদ দায়ক হয়। তবে তার স্থায়িত্ব নাও থাকতে পারে এবং ওই ধনসম্পদ নৈতিক পথে অর্জিত নাও হতে পারে। এছাড়াও ধননাশক গ্রহের অবস্থান, দৃষ্টি ও সম্বন্ধ বিশেষ ভাবে পর্যালোচনা করা আবশ্যক। মনে রাখতে হবে, মোট আয় – মোট ব্যয় = সার্বিক ধন সম্পদ।
গ) ধন সম্পদ বিচারের মূল সূত্র :-
১) লগ্ন, দ্বিতীয় ও একাদশের সঙ্গে যদি – ২) পঞ্চম/নবম, ৩) নবম/দশম, ৪) দশম/একাদশ, ৫) চতুর্থ+অষ্টম, অথবা – তৃতীয় + ষষ্ট + একাদশ-এর সঙ্গে “রাহুর” যোগ বা অবস্থান করে। এছাড়া লগ্ন/চন্দ্রের দশমে যদি – রবি/বুধ/বৃহঃ/শুক্র অবস্থান করে, বা বৃহস্পতি দ্বিতীয়/পঞ্চম, দ্বিতীয়/একাদশ পতি হয়ে স্বক্ষেত্রে/ মিত্র ক্ষেত্রে/তুঙ্গ ক্ষেত্রে/মূল ত্রিকোণে অবস্থান করে, বা শুভ ভাবস্থ হয়ে কোনও যোগকারক গ্রহের সঙ্গে শুভ সম্বন্ধ দ্বারা আবদ্ধ হয়। মূল সূত্রের দুই বা ততোধিক শর্ত শুভ কারক হলে বিপুল ধন কারক হবে।
ঘ) ধন সম্পদ লাভে সহায়ক শুভ যোগ –
মহাভাগ্য যোগ, চন্দ্রাধী ও লগ্নাধী যোগ, চন্দ্রপ্রভা যোগ, ধর্মকর্মাধীপ যোগ, গজ কেশরী যোগ, গুরু সৌরি যোগ, ক্ষেত্রে সিংহাসন যোগ, পঞ্চ মহাপুরুষ যোগ এবং যোগকারক গ্রহের সম্বন্ধ জনিত সব ধরনের রাজযোগ।
ধন সম্পদের অন্তরায় অশুভ যোগ :-
হুতাশন যোগ, কেমদ্রুম, দারিদ্র যোগ, ধননাশ যোগ এবং তীব্র আধ্যাত্মিক যোগ। যে কোনও ধরনের আধ্যাত্মিক যোগ থাকলে জাতক/জাতিকা অর্থের বদলে পরমার্থ( মোক্ষ) লাভ করে ।
ইন্দু লগ্ন :- জাতকের জীবনে ভাগ্যোদয়ের দিক, দিশা ও ধনের পরিমাণের নির্দেশ দেয়। যদি ইন্দুলগ্ন কে একাধিক গ্রহ দৃষ্টি দেয় বা একাধিক গ্রহের সঙ্গে অবস্থান করে এবং ওই ভাবটি যদি চর, দ্বি-স্বভাব, বা অগ্নি রাশি গত হয়, তাহলে বিপুল ধন কারক হবে।
রাশিচক্র বিচার, বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত :-
বিল গেটস-এর রাশিচক্রটি দেখুন (রাশিচক্র-১) – জাতকের কর্কট লগ্ন, মীন রাশি, উত্তর ভাদ্রপদ নক্ষত্র। লগ্নপতি চন্দ্র নবমে, বুধ স্বক্ষেত্রে ও যোগকারক মঙ্গল যুক্ত। সপ্তম পতি শনি তুঙ্গস্থ হয়ে স্বক্ষেত্রস্থ শুক্রের সঙ্গে সহাবস্থান করছে। নবম পতি বৃহস্পতি দ্বিতীয় ভাবে অর্থাৎ ধন ভাবে। জাতকের আত্মকারক গ্রহ শনি এবং অমাত্যকারক গ্রহ শুক্র। স্বক্ষেত্রস্থ শুক্রের সঙ্গে শনির সহাবস্থান বিশেষ শুভকারক এবং যোগকারক হয়েছে। জাতকের লগ্ন, পঞ্চম ও নবম, এই তিনটি ভাবই জলরাশিস্থ হয়েছে। লগ্নপতি চন্দ্র, পঞ্চম ও দশমপতি মঙ্গল ও ভাগ্যপতি বৃহস্পতি শুভভাবস্থ হওয়ার ফলে জাতকের দেহ-মন-আত্মার সবলতা(লগ্ন), বিদ্যা-বুদ্ধি-বিচার ক্ষমতা ও স্বাভাবিক প্রতিভার বিকাস(পঞ্চম) এবং ভাগ্য ভাব(নবম) সুদৃঢ় হয়েছে। জাতক কম্পিউটার ও সফটওয়্যার ব্যবসায় সাফল্য লাভ করেছেন ও প্রভূত ধন-সম্পদ ও প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন। সপ্তম পতি শনি তুঙ্গস্থ হয়ে শুক্র যুক্ত। শনি যন্ত্র ও যন্ত্রাংশের কারক অন্যদিকে রাহু ইলেকট্রনিকস ও সফটওয়ারের কারক। চতুর্থ ভাবে শুক্র, শনি ও রবি সহাবস্থান করায় দ্বিতীয়, সপ্তম ও একাদশ ভাবের শুভ সংযোগ স্থাপন করেছে এবং দশম ভাবকে পূর্ণ দৃষ্টি দিচ্ছে। জাতকের তৃতীয় ভাবে বুধ স্বক্ষেত্রস্থ হয়ে মঙ্গল যুক্ত হওয়ায় স্বাভাবিক বিষয়বুদ্ধি, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতি আগ্রহ এবং মঙ্গলের প্রভাবে ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা ও সাহস দিয়েছে। জাতকের কর্ম ভাবটি খুবই শুভ। দশমে রবি, মঙ্গল, রবি, শুক্র, শনি ইত্যাদি পাঁচটি গ্রহ পূর্ণ দৃষ্টি দিচ্ছে। এছাড়া দশম ভাবটি চর, অগ্নি রাশি ও নিষ্কলুষ, অর্থাৎ কোনও পাপগ্রহের অবস্থান বা দৃষ্টি নেই। ফলে জাতকের কর্মভাগ্য অতীব সুদৃঢ়। ব্যবসা বাণিজ্যে সাফল্য পেতে হলে- সাহস, ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা, লড়াই করার শক্তি, বিপক্ষকে পরাস্ত করার শক্তি ও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকার জন্য শক্তি ও সূক্ষ্ম বুদ্ধির আবশ্যক হয়। ষষ্ঠ ভাবও অগ্নি রাশি, ষষ্ঠ ভাবে রাহু, শনি, মঙ্গল ও বৃহস্পতি –এই চারটি গ্রহের পূর্ণ দৃষ্টি থাকায় ষষ্ট ভাব যথেষ্ট বলশালী হয়েছে। ফলে জাতক ব্যবসায় অনায়াস সাফল্য ও দীর্ঘস্থায়ী প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন।

জাতকের ধনভাব (২য় ও ১১শ) বিচারে দেখা যাচ্ছে ভাগ্যপতি ও স্বাভাবিক ধনকারক গ্রহ বৃহস্পতি দ্বিতীয় ভাবে অবস্থান করছে এবং দ্বিতীয়াপতি রবি একাদশপতি শুক্রের সঙ্গে সহাবস্থান করছে এবং (রবি) ও সপ্তম পতি(শনি) নীচ-ভঙ্গ রাজযোগ তৈরি করেছে, এছাড়া একাদশে রাহুর দৃষ্টি থাকায় অনায়াস ধনলাভে সহায়ক হয়েছে। সপ্তম ভাব বিশেষ ভাবে বলশালী হওয়ায় জাতক ব্যবসা দ্বারা বিপুল ধনলাভে সক্ষম হয়েছেন।
জাতকের রাশিচক্রে একাধিক ধনকারক শুভযোগ বর্তমান। চন্দ্রের ষষ্ঠে বৃহস্পতি, সপ্তমে বুধ ও অষ্টমে শুক্র থাকায় শুভ চন্দ্রাধি যোগ, রবি (২য়) ও শুক্র (১১শ) সংযোগ, সপ্তম পতির সঙ্গে দ্বিতীয় ও একাদশ পতির সহাবস্থান জনিত ধনযোগ, দ্বিতীয়াপতির সঙ্গে আত্মকারক ও অমাত্যকারক গ্রহের সংযোগের ফলে বিশেষ ধনযোগ(জৈমিনি) এবং চন্দ্রের সপ্তমে যোগকারক মঙ্গল থাকায়, চন্দ্র ও মঙ্গলের পরস্পর দৃষ্টি বিনিময়ে শুভ চন্দ্র-মঙ্গল যোগ তৈরি করেছে। জাতকের লগ্নের কেন্দ্রে তুঙ্গস্থ শনি থাকয় শশ যোগ, রবি-শনির সহাবস্থানে নীচ-ভঙ্গ রাজযোগ, চতুর্থে স্বক্ষেত্রস্থ শুক্র থাকায় শুভ মালব্য যোগ ইত্যাদি শুভযোগ বিপুল ধনকারক হয়েছে। সর্বোপরি, তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হোল জাতকের জন্মকাল মধ্য রাত্রির এক ঘণ্টা পূর্বে এবং লগ্ন, চতুর্থ, সপ্তম ও দশম - চারটি কেন্দ্র-স্থানই চর রাশিস্থ। রাত্রিতে জন্ম হওয়ায় লগ্নপতি চন্দ্র কালবল যুক্ত এবং নবমে থাকায় চির-ভাগ্য যোগ হয়েছে। দ্বাদশে ইন্দুলগ্ন অবস্থান করায় জাতক শেয়ার বাজারে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে প্রভূত অর্থলাভ করেছেন এবং শেয়ার বাজারে কোম্পানির শেয়ার মূল্য ও চাহিদা প্রবল হয়েছে। চন্দ্র লগ্নপতি হওয়ায় জাতকের মানবিক অনুভূতি প্রবল। দ্বাদশভাব ব্যয়ভাব, ইন্দুলগ্ন দ্বাদশে থাকার ফলে জাতক জনস্বার্থে ও সেবা মূলক কাজে প্রচুর অর্থদান করেছেন। সপ্তম পতির সঙ্গে লগ্নপতি ও একাদশ পতি সংযোগ থাকায় জাতকের স্ত্রীও তার সহায়ক হয়েছেন এবং বিপুল অর্থ দানের মাধ্যমে “মিলিন্ডা-গেটস ফাউন্ডেশন” স্থাপন করেছেন। সেই দানে বিশ্বের বহু মানুষ উপকৃত হয়েছেন। কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তির কল্যাণে “বিল গেটস” নামটি এখন সারা বিশ্বে একটি অতি পরিচিত নাম।
ধীরুভাই আম্বানি-র রাশিচক্রটি দেখুন (রাশিচক্র-২), এক ঝলক দেখলে মনে হবে একটা অতি সাধারণ বা গড়পড়তা একটা রাশিচক্র। প্রথমেই চোখে পড়বে অশুভ কালসর্প যোগ ও ধন নাশক যোগ। কিন্তু গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে ধরা পড়বে জন্মছকটির অনন্য বৈশিষ্ট্য ও অভিনবত্ব। যেমন – জাতক লগন চাঁদা, ত্রিবিধ লগ্ন – জন্মলগ্ন, চন্দ্র-লগ্ন ও রবি-লগ্ন একই ধনু রাশি, ধনু দ্বি-স্বভাব অগ্নি রাশি। এছাড়া লগ্ন, পঞ্চম ও নবম তিনটি ভাবই অগ্নি রাশি। ত্রিবিধ লগ্ন ও তিনটি কোণ স্থান অগ্নি রাশি হওয়ায় জাতকের চরিত্রে একটা বিশেষ সাযুজ্য (Integrity) দিয়েছে। জাতকের দেহ-মন-আত্মার ঐক্য ও আত্মিক বোধ সুদৃঢ় করেছে। জাতকের জীবনে ধনু রাশির সার্বিক গুণ পূর্ণ মাত্রায় বর্তাবে। জাতকের জীবনে ধনু রাশির সকল কারকতার সমাবেশ ঘটবে। জাতক হবেন – নির্ভীক, সজাগ সচেতন, আত্মবিশ্বাসে ভরপুর, ধীর-স্থির, অবিচল লক্ষ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, ধৈর্য ও নিষ্ঠায় অবিচল। জাতক বাইরে কর্মী অন্তরে আত্মবোধে লীন। সুদূরপ্রসারী ভাবনা-চিন্তা ও লক্ষ্য সামনে রেখে মরণপণ লড়াই করা, লেগে থাকা, ভিতরে ও বাহিরে সমান দৃষ্টি ও আত্মপ্রতিষ্ঠায় অবিচল ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন। এ জাতক জীবন যুদ্ধের লড়াকু সৈনিক, ভাগ্যের হাতের পুতুল নয়। প্রবল পুরুষকারে নিজের ভাগ্য, সাধ-আহ্লাদ-স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করবেনই।

জাতক দিবা কালে অযুগ্ম রাশি ও অযুগ্ম লগ্ন-তে জন্ম গ্রহণ করেছেন অর্থাৎ জন্মক্ষণেই মহা-ভাগ্য যোগে জন্ম গ্রহণ করেছেন। জাতকের লগ্নপতি বৃহস্পতি দশমে ও নবমপতি রবির নক্ষত্রে, আত্মকারক মঙ্গল নবমে মোক্ষ কারক কেতুর সঙ্গে সহাবস্থান করছে, মঙ্গল ও কেতু উভয়েই একাদশপতি শুক্রের নক্ষত্রে রয়েছে। ভাগ্য পতি রবি লগ্নে ও কেতুর নক্ষত্রে। লগ্নে পূর্ণিমান্ত (প্রতিপদ) চন্দ্র রয়েছে একাদশপতি শুক্রের নক্ষত্রে, চন্দ্র পক্ষবল যুক্ত এবং পূর্ণবলী, ফলে বিশেষ শুভকারক।সপ্তম পতি বুধ ব্যবসা-বাণিজ্যের কারক। বুধ জাতকের অমাত্যকারক গ্রহ, স্ব নক্ষত্রে রয়েছে এবং একাদশ পতি শুক্রের সঙ্গে অবস্থান করছে, জাতকের সপ্তম ভাবে রবি, চন্দ্র ও রাহু পূর্ণ দৃষ্টি দিচ্ছে। সপ্তমে ভাগ্যপতি রবির দৃষ্টি থাকায় জাতক ব্যবসার মাধ্যমে করছেন।
জাতকের ধনভাব (২য় ও ১১শ) বিচারে দেখা যাচ্ছে ধনভাবে শনি অবস্থান করছে, শনি অভাবাত্মক গ্রহ, কিন্তু শনি স্বক্ষেত্রে থাকায় ও চন্দ্রের নক্ষত্রে থাকায় অশুভত্ব কেটে গেছে এবং বৃহস্পতির দৃষ্টি দেওয়ায় ধনভাব বলশালী হয়েছে। একাদশ ভাবে শনি ও রাহুর দৃষ্টি থাকায় ধনভাব সুদৃঢ় হয়েছে। রাহু তামসিক গ্রহ তৃতীয়ে স্ব নক্ষত্রে অবস্থান করছে। রাহু অনায়াসে ধনলাভের কারক গ্রহ এবং একাদশ, নবম ও সপ্তম ভাবকে পূর্ণ দৃষ্টি দিচ্ছে। ফলত বিপুল ধনকারক ও লাভ দায়ক হয়েছে। বিল গেটসের মতো আম্বানি-জীর ইন্দুলগ্ন দ্বাদশে অবস্থান করছে। সপ্তমপতি ও একাদশপতির অবস্থান ও মঙ্গলের জোড়াল দৃষ্টি থাকয় জাতক ব্যবসার জন্য বিনিয়োগের অর্থ জনগণের কাছ থেকে সংগ্রহ এবং ব্যবসা করে লাভবান হয়েছেন। ইন্দুলগ্ন স্থির রাশি হওয়ায় এবং ইন্দু-লগ্নে দুটি গ্রহ অবস্থান ও মঙ্গলের দৃষ্টি থাকায় ধনভাগ্য প্রবল ভাবে শুভদায়ক হয়েছে। একটা ব্যবসা থেকে শুরু করে একাধিক ব্যবসার সম্প্রসারণ সম্ভব হয়েছে।
মহা-ভাগ্য যোগ ছাড়াও জাতকের রাশিচক্রে - গজ কেশরী যোগ, বিপরীত রাজযোগ, চন্দ্রপ্রভা যোগ, অমলা যোগ ও অখণ্ড সাম্রাজ্য (সুকীর্তি) যোগ ইত্যাদি শুভ যোগ বর্তমান। যার ফলে জাতক জীবনে সাফল্য, প্রতিষ্ঠা ও বিপুল ধনসম্পদের অধিকারী হয়েছেন।