গত বেশ কিছুদিন হলো কাকাই তাতোনকে কম্পিউটার শেখানোর জন্য একদম সময় দিতে পারছিল না, নিজের একটা জরুরী কাজ শেষ করার জন্য। সেটা গত কালই শেষ হয়েছে। অতএব এখন কাকাইকে কিছুটা সময় অবশ্যই তাতোনবাবুকে দিতে হবে। আর তাতোনেরও কদিন গেমস খেলে আর কম্পিউটারের সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণাটা হয়ে যাবার ফলে যন্ত্রটাকে আর অতোটা পর পর মনে হচ্ছে না, কিছুটা খেলার সাথী বা বন্ধু বলে মনে হচ্ছে। তবে কি আমার মাথাটাও ..........., তাতোন নিজের মনেই হেসে ফেললো কথাটা ভেবে।
ক’দিন ধরে তাতোন কাকাইকে একমনে কাজ করতে দেখতো আর অবাক হয়ে ভাবতো কাকাই কী-বোর্ডের অতগুলো বোতামের কোনটার কি কাজ কি করে মনে রাখে। কখনও আবার মনিটারের দিকে তাকিয়ে থেকেই বিভিন্ন বোতাম টিপে যাচ্ছে অনায়াসে। তাতোন এসব দেখতে আর ভাবতো নিজে কি কখনও কাকাইয়ের মতো কাজ করতে পারবে? মনে হয় না। আজ কাকাইয়ের মেজাজটা বেশ ভাল দেখে ওর এইসব চিন্তাগুলো কাকাইকে খুলে বলে ফেললো। কাকাইতো শুনে প্রথমেই একচোট ঘর ফাটিয়ে হেসে নিলো। তারপর খুব খুশি মনে তাতোনের পিঠ চাপড়ে বললে, “গুড্ -- এই যে তুই কম্পিউটার নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছিস, দেখবি এটাই তোকে একদিন কম্পিউটার শিখতে সাহায্য করবে। শুধু কম্পিউটারই নয়, যে কোন জিনিসই শিখতে হলে সেই বিষয়টা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে। তবেই সেই বিষয়টা তোর কাছে ধরা দেবে। আর একটা কথা - যেটা শিখবি, তা সেটা যে বিষয়ই হোক না কেন, যুক্তি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করবি। আমি বা তোর স্কুলের স্যার বলেছেন, অতএব সেটাই ঠিক, এ কথাটা ধরে নিবি না, আর তোর যুক্তির সঙ্গে না মিললেই আমাকে বা স্কুলের স্যারকে বা যিনি শেখাবেন তাঁর কাছে ব্যাখ্যা চাইবি। এতে কিন্তু প্রকৃত শিক্ষক কখনই বিরক্ত হবেন না। বরং খুশি মনে তোকে বোঝাবার চেষ্টা করবেন।”
যাই হোক, আজ তোকে তাহলে কী-বোর্ড - এর ব্যাপারটাই বোঝাই। কাকাই বলল, তার আগে তুই আমায় বলতে কী বোর্ডটা কম্পিউটারের কোন অংশ ? আর এটা কম্পিউটারের কোন ওয়্যারে অর্থাৎ হার্ডওয়্যার না সফট্ওয়্যারে পড়ে? তাতোন উত্তর দিলো ‘কী বোর্ড হলো কম্পিউটারের ইনপুট অংশ, আর এটা হার্ডওয়্যার পর্যায়ে পড়ে। কাকাই বললো, “ঠিক বলেছিস। তার মানে আামরা কম্পিউটারে যে সব নির্দেশ পাঠাবো সেগুলো এই কী-বোর্ডের মাধ্যমে পাঠাতে হবে।
‘প্রথমে কম্পিউটারের সুইচ অন করার পর স্ক্রিনে কয়েকটি লেখা ফুটে উঠবে। একে বলে কম্পিউটারের - ‘সাইন অন ম্যাসেজ। এর মানে কম্পিউটার ঠিক আছে। এর পর দেখা যাবে একটা ‘>’ চিহ্ন আর তার পাশে একটা ছোট্ট আলো দপদপ করে জ্বলছে ও নিভছে। ‘>’ চিহ্নটাকে বলে সিস্টেম প্রম্পট আর দপদপ করা আলোক চিহ্নটাকে বলে কারসার। কাকাই বলল, “ যতক্ষণ না ‘>’ চিহ্নটা দেখা যাবে ততক্ষণ কম্পিউটার প্রস্তুত নয়। ‘>’ চিহ্নটা আসার পরই পরবর্তী নির্দেশ কী বোর্ড – এর মাধ্যমে কম্পিউটারকে দিতে হবে।
“এবার কী বোর্ড-এর দিকে লক্ষ্য কর,” কাকাই তাতোনকে বলল। “কার সঙ্গে এর মিল আছে বলতে পারবি?” তাতোন বলল, “কেন বাবার টাইপ মেশিনেও তো এরকম অনেকগুলো বোতাম আছে।”
কাকাই বলল, “ঠিক বলেছিস। কিন্তু কম্পিউটারের কী বোর্ড-এ অতিরিক্ত কতকগুলি বোতাম বা কী’ আছে টাইপরাইটারে যেটা নেই, সেগুলি হলো F1 থেকে F10 এই দশটি বোতাম, CAPS LOCK, Ctrl (CONTROL), Alt, SHIFT, ESCAPE, DELETE, RETURN, PAUSE এবং CURSOR MOVE করানোর জন্য → ‘ ’ এই চিহ্নিত বোতাম গুলি।’’
তাতোন বললো, আচ্ছা কাকাই এগুলো তো বুঝলাম। কিন্তু এটা বলতো, A,B,C,D, অক্ষরগুলো পর পর না লিখে এলোমেলো করে দেওয়া আছে কেন? কাকাই বলল, এগুলি একটা আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে করা হয়েছে। পৃথিবীর যে কোন দেশেই টাইপরাইটার বা কম্পিউটারে এই ভাবেই সাজানো থাকে অক্ষরগুলি। আর একটা অক্ষরের জন্য মানুষের এক একটা আঙুল নির্দিষ্ট করা আছে। এটা একটা লেসনের (Lession) মাধ্যমে শিখতে হয়। কোন কোন অক্ষরের জন্য কোন কোন আঙুল তুই যদি তা ভালভাবে রপ্ত করতে পারিস তাহলে তুইও আমার মতো না দেখে ঠিক ঠিক অক্ষর টাইপ করতে পারবি, যেটা দেখে তুই অবাক হয়ে গিয়েছিলি।
এবারে আসি কী বোর্ডের ভেতরের অংশে। টাইপ রাইটারের যখন কোন কী’ ধর A চাপা হয় তখন কি হয় ? A লেখা একটি হাতুড়ি কালি লাগানো একটা রিবন বা ফিতের উপর এসে পড়ে। সেই রিবনের পিছনেই কাগজ থাকার জন্য কাগজের উপর A অক্ষরটি ফুটে ওঠে। কিন্তু কম্পিউটারের বেলায় কি হয়। কোন ‘কী’ যখনই চাপা হয় তখনই ঐ কী একটা ইলেকট্রিক সিগন্যাল সি পি ইউতে পাঠিয়ে দেয়। কম্পিউটারের প্রত্যেক কী’ এর নীচে থাকে দুইটি তার। একটি উল্লম্ব (Vertical) আর অপরটি আনুভূমিক (Horizontal) অবস্থানে। যখনই কম্পিউটার চালু করা হয় কী’ বোর্ডের মাইক্রোপ্রসেসার সঙ্গে সঙ্গে সক্রিয় হয়ে ওঠে। এবং সেকেণ্ডে কয়েক হাজার বার উল্লম্বভাবে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে আনুভূমিক তারেও বিদ্যুতের নিরবিচ্ছিন্ন প্রবাহ পরবর্তী নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। যখনই কোন ‘কী’ চাপা হয় উল্লম্ব তার এবং আনুভূমিক তারের সংযোগ ঘটে এবং মাইক্রোপ্রসেসর সেই নির্দেশ ডিজিটাল কোডের মাধ্যমে কম্পিউটারের CPU তে পাঠিয়ে দেয়। আর এর পরের কাজ CPU করে। কী বোর্ডের প্রতিটি ‘কী’ এর ভেতরে একটি স্প্রিং থাকার ফলে ‘কী’ ছেড়ে দিলেই এটি আবার পূর্ববস্থায় ফিরে আসে। তো এই হল কম্পিউটার কী বোর্ডের ভেতরের ব্যাপার। এবার তুই একবার চিন্তা করে দেখ ঠান্ডা মাথায়, কাকাই বললো,—“ তুই একবার একটা কী চেপে ছেড়ে দিলি। এরপর কতগুলি কাজ ভেতরে ভেতরে হয়ে গেল কি অস্বাভাবিক দ্রুততায়।
যদি দেখিস ‘কী’ বোর্ড-এ ক্যাপস লক্ বলে চিহ্নিত জায়গায় একটা সবুজ আলো জ্বলছে, তখন তুই যে হরফই টাইপ করবি, ইংরাজীতে তা বড় হাতের অক্ষরে অর্থাৎ ক্যাপিটাল লেটার-এ স্ক্রিনে দেখা যাবে। আবার ক্যাপস লক্ বোতাম আর একবার টিপে দিলে আলোটা নিভে যাবে। আর সেই সঙ্গে টাইপ করা হরফগুলি ছোট হাতের অক্ষরে অর্থাৎ স্মল লেটারে টাইপ হবে। এখন যদি ছোট হরফে টাইপ করতে করতে বড় হরফ দরকার হয় তবে SHIFT চিহ্নিত বোতাম টিপে হরফটি টাইপ করলে শুধুমাত্র ঐ হরফটি ক্যাপিটাল লেটার- এ মনিটরে ফুটে উঠবে।” ‘আচ্ছা কাকাই,’ তাতোন বললো, ‘কয়েকটা বোতামে দেখছি দুটো করে চিহ্ন আছে। একটা নীচে আর একটা ওপরে। এই রকম বোতাম টিপলে কোনটা মনিটারে ফুটে উঠবে ?’ কাকাই বলল, ‘Shift লেখা বোতামটা টিপে দুটো চিহ্নগুলোর বোতামটা টিপলে ওপরের চিহ্নটা ফুটে উঠবে।’
এবার কাকাই বললো, ‘ একটা জিনিস লক্ষ্য করেছিস্, যখনই কোন হরফ বা চিহ্ন মনিটারে ফুটে উঠেছে তখনই কারসারটা সরে সরে যাচ্ছে। হরফ বা চিহ্নটাকে জায়গা করে দিচ্ছে। এখন যদি তুই কিছু ভুল লিখে থাকিস বা খানিকটা জায়গা ছেড়ে অন্য কোথাও কিছু লিখতে চাস্ তবে তোকে আগে চিহ্নিত বোতামগুলো টিপে কারসারটা তোর দরকার মতো জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। তবেই সেই জায়গায় লেখা ফুটে উঠবে বা ভুল লেখাটা মোছা যাবে। এই কারসার সরানোর কাজটা তুই মাউস দিয়েও করতে পারিস। আবার তুই যদি দুটো হরফ বা চিহ্নের পাশে কিছুটা ফাঁকা জায়গা চাস তবে তোকে একদম নীচে কোন চিহ্ন না দেওয়া লম্বা বোতামটাকে টিপতে হবে। এই বোতামটির নাম Space Bar। এটা একবার টিপলে কারসার একঘর সরে যাবে ডানদিকে। এইভাবে একলাইন লেখার শেষে কারসার আপনা হতেই পরের লাইনের শুরুতে চলে যাবে।’
কাকাই বলল, ‘এবার বলতো এই যে বোতাম টিপেটিপে যে নির্দেশগুলো দেওয়া হলো সেগুলো সবই কি কম্পিউটার সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে নিলো ?’ তাতোন বললো, ‘তাতো নেবেই। ওকে দেবার জন্যই তো নির্দেশ দেওয়া হলো।’ কাকাই বললো, ‘না তা নয়, যতক্ষণ না আমি একটা সম্পূর্ণ নির্দেশের শেষে ( ) চিহ্নিত বোতামটা টিপছি ততক্ষণ কম্পিউটার সে নির্দেশ গ্রহণ করবে না। অর্থাৎ প্রত্যেকটা নির্দেশের শেষে Return ( ) চিহ্নিত বোতামটা টিপতে হবে। এছাড়া আর একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে আজ শেষ করবো সেটা হলো এই যে এতসব নির্দেশ বা তথ্য দেওয়া হলো কম্পিউটারকে তা কিন্তু সব মুছে যাবে কম্পিউটার-এর সুইচ অফ করার সাথে সাথেই।’ তাতোন বললো, ‘তাহলে, তুমি যে বলেছিলে সব নির্দেশ স্মৃতি অংশে রেখে দেওয়া যায় ?’ কাকাই বলল, ‘হ্যাঁ, রেখে দিতে হলে তারও একটা নির্দেশ দিতে হবে। সেটা হলো ‘সেভ’ (Save) করে রাখার নির্দেশ। এই সেভ নির্দেশ দিলে কম্পিউটারের মধ্যে হার্ডডিক্সের স্মৃতি অংশে নির্দেশ বা তথ্য মজুত থাকবে। এছাড়া আরও কয়েকটি রাস্তা আছে এই নির্দেশ ভবিষ্যতের জন্য ধরে রাখার, সেগুলি হলো, কম্প্যাক্টডিক্স বা CD অথবা পেন ড্রাইভ (Pen Drive) ইত্যাদিতে কপি করে রাখা। এগুলি হলো কম্পিউটারের বাইরে নির্দেশাবলী মজুত রাখার ব্যবস্থা। এগুলিকে বলে Storage Device। এই সব স্টোরেজ ডিভাইসে সাধারণত Copy করে বিভিন্ন তথ্য বা নির্দেশ মজুত করে রাখা যায়।

কম্পিউটারের পরিভাষায় এইভাবে সংরক্ষণ বা মজুত করে রাখাকে বলে Backup করে রাখা।’ কাকাই তাতোনকে বললো, ‘তুই শুনলে অবাক হয়ে যাবি এই একটা সিডি ডিক্সের মধ্যে তোর ঘরের এক র¨াক (Rack) ভর্ত্তি বই কপি করে তোর ছোট্ট ড্রয়ারের মধ্যেই রেখে দেওয়া যাবে। তাতোন তো শুনে অবাক ‘কি বলছ ! একটা ড্রয়ারে এক র¨াক ভর্তি বই !’ কাকাই বলল, ‘এতেই অবাক হচ্ছিস্ এতো সামান্য কম্প্যাক্ট ডিস্ক। একটা 8 বা 16 বা 32 (GB) জিবি পেন ড্রাইভে একটা বড়সড় লাইব্রেরীর সমস্ত বইয়ের তথ্য রেখে দেওয়া যায়। এই 8, 16 বা 32 GB কথাটির মানে হলো গিগাবাইট ক্ষমতাসম্পন্ন পেন ড্রাইভ। যত বেশী গিগাবাইট তত বেশী ধারণ ক্ষমতা। তোর স্কুলের লাইব্রেরীর সব বই একটা আট জিবি পেন ড্রাইভে রেখে দেওয়া সম্ভব। তাহলে বুঝতে পারছিস কম্পিউটারের কি অসীম ক্ষমতা।