প্রকাশকের কথা

    প্রকাশনা জগতে প্রথম পা রাখার সময় থেকে আজ অবধি বহু বছর পার হয়ে গেল। ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিষয়ের নানাবিধ বই প্রকাশ করা হয়ে গেছে। এমন কি একটি কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক্স সংক্রান্ত মাসিক পত্রিকাও প্রায় আট বছর যাবৎ প্রকাশনা করার অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু কস্মিনকালেও ভাবিনি যে আদিবাসী ও দলিত সংক্রান্ত এমন একটি পত্রিকা তাও আবার পুজোসংখ্যা ছাপার সৌভাগ্য কোনদিন আমাদের সংস্থার হতে পারে। সত্যি কথা বলতে কি এই জনজাতি জগৎ সম্পর্কে অজ্ঞানতার কারণে আমার ব্যক্তিগত ধারণাটাও খুব একটা পরিষ্কার ছিল না। কিছুটা আমাদের সম্পাদক অধ্যাপক ইন্দ্রনীল আচার্য্যের উৎসাহ, উদ্দীপনা আর অপরিসীম আগ্রহ এবং সেই সঙ্গে আমার সহযোগী এবং অভিন্ন হৃদয় বন্ধু সমর আঢ্যের অনুপ্রেরণাই আমাকে এই নতুন বিষয়টিতে আগ্রহী করে তুলেছে। আর সেই আগ্রহেই আমার এই জগতে প্রবেশ করা।
    যাই হোক, অচেনা জগতে প্রবেশ বা অনুপ্রবেশ যাই হোক না কেন এখন মনে হচ্ছে এখানে না এলে জীবনে অনেক কিছুই অজানা অচেনা থেকে যেত। ভারতবর্ষের বিভিন্ন জনজাতি গোষ্ঠীর এতো ব্যাপ্তি তাঁদের ভাষা, সংস্কৃতি, জীবনযাপন, বিশ্বাস, ধর্মাচরণ ও সংস্কার, লোকাচার-এর কোনও তল খুঁজে পাওয়া ভার। শুধুমাত্র বিভিন্ন জনজাতি গোষ্ঠীর বিভিন্ন ভাষায় প্রকারভেদ এবং বৈচিত্র্য এতো বিশাল যে শুধুমাত্র এই বিষয়ে পড়াশুনা করেই একটা জীবন কাটিয়ে দেওয়া যায়। সেইসঙ্গে আক্ষেপের বিষয় এটাও যে এই বিভিন্ন ভাষার মধ্যে বেশ কিছু ভাষার অস্তিত্ব বিপন্ন হতে চলেছে উপযুক্ত পরিচর্যার অভাবে এবং অবশ্যই আধুনিক সভ্যতা এবং নগরায়নের দৌলতে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু জনজাতি গোষ্ঠীর ভাষা আজ বিলুপ্ত এবং বেশ কিছু ভাষা বিলুপ্তপ্রায় অবস্থায় বা অস্তিত্ব রক্ষায় সচেষ্ট।
    আমাদের সৌভাগ্য যে অধ্যাপক ইন্দ্রনীল আচার্য্যের মতো কিছু উদ্যোগী মানুষ আজও আছেন যাঁরা এই ভাষা বা জনজাতিগোষ্ঠীকে বিপন্নতার হাত থেকে রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছেন নিঃস্বার্থভাবে, বিনিময়ে কিছু পাওয়ার আশা না করেই শুধুমাত্র এই জনজাতি গোষ্ঠীকে ভালোবেসে আর অবলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে। আর তাঁর মতো কিছু ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে এই কর্মযজ্ঞে সামিল হতে পেরে আমরা নিজেদের ধন্য মনে করছি। আমাদের এই প্রকাশনা সংস্থার এই পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে যদি কিছু সংখ্যক দেশবাসীকেও সচেতন করতে পারি, বা সাহায্য করতে পারি সেইসব বিপন্ন জনজাতি গোষ্ঠীদের যাঁদের বর্হিজগতের (পড়ুন, তথাকথিত সভ্যজগতের সঙ্গে) সম্পর্কটাই অবলুপ্তির দিকে এগিয়ে চলেছে। তাহলেই আমাদের এই প্রচেষ্টা সার্থক বলে মনে করবো।


কলকাতা, ১৩.৯.২০১৭  

 সুকুমার গুপ্ত